অন্তত একবার বলুন, “আমি তোমাকে ভালবাসি”

আচ্ছা, যারা লেখার নামটা পড়েই মুচকি হাসি দিয়েছেন তাদের আগেভাগেই বলে রাখি—ঐ কথাগুলো কিন্তু কেবল আপনার স্বামী বা স্ত্রীর জন্যে। অন্যের স্বামী-স্ত্রী তো দূরের কথা, এমনকী ‘হবু’ সঙ্গীর জন্যেও না। অতএব যারা প্রেম-টেম করছেন তাদের বলি আগে বিয়েটা সারুন, তারপর এই লেখা পড়লে লাভ হবে!

একবারই কেন বলতে হবে? আসলে শুনতে খুব কম মনে হলেও এমন কজন দম্পতি আছেন যারা ক’বছর পরও সংসারে ‘ভালবাসা’টাকে টিকিয়ে রাখতে পারেন? প্রায় সবার জন্যেই ব্যাপারটা অভ্যেসে দাঁড়িয়ে যায়, সংসার পরিণত হয় ‘বোঝা’য়। এর পেছনে বহু হাজার কারণ থাকলেও সমাধানের সূত্র কিন্তু কেবল কয়েকটাই :

প্রথমত, প্রত্যাশাকে যুক্তিসঙ্গত রাখুন। ‘অতঃপর তাহারা সুখে-শান্তিতে থাকতে লাগল’ অথবা হিন্দি-সিরিয়ালের মতন চূড়ান্ত ভালবাসা-বাসি, কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারে না–এমনতর যদি ভেবে থাকেন তাহলে বলতে হবে আপনার আশা কখনও পূর্ণ হবে না। কারণ বাস্তবে কক্ষণও এমন হয় না। আবার আপনি যদি ভাবেন যে প্রেম করার সময় যেমন ছিল আপনার স্বামী/ স্ত্রী এখনো তেমন আচরণ করবে তাহলে ভুল করছেন। কারণ খোঁজ নিয়ে দেখবেন–প্রেমিক পুরুষ আর বিবাহিত স্বামী—এ দুয়ে আকাশ-পাতাল তফাত। মেয়েদের বেলায়ও তাই। কারণ প্রেমিকা যত সহজে সব কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করে- স্ত্রী কিন্তু মোটেও তেমন নন; নাস্তায় একটা বাড়তি পদ চাইলেই তার মেঘগর্জন শুনতে হয়! তাই অন্যের সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিয়ে বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা করুন। 

আর শুনতে খুব খারাপ শোনালেও আর্থিক ব্যাপারটা কিন্তু খুব বেশি জরুরি। ঐ যে বলে না—অভাব যখন সদর দরজা দিয়ে ঢুকে, প্রেম তখন খিড়কি দিয়ে পালিয়ে যায়! একটা মজার ঘটনা ছেপেছিল রিডার্স ডাইজেস্টে : এক তরুণ ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে হাতেনাতে। পুলিশের ডান্ডা খেয়ে সে স্বীকার করে যে, তার প্রেমিকার একটা হীরের আংটির খুব শখ। কিন্তু গরিব বলে সে আংটির টাকা যোগাতে ডাকাতি করতে গিয়েছিল! ভাগ্যের পরিহাস হলো ঐ ঘটনা শুনে প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে যায়! অতএব হীরের আবদার করার আগে স্বামীর অবস্থাটা বুঝে নেবেন। প্রত্যাশা যেন পকেটের সাথে মানিয়ে চলে সে খেয়াল রাখবেন।       

আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মনে ক্ষোভ চেপে রাখবেন না। ‘ও আমাকে বুঝল না’—এমনটা ভাবতে গেলে সারাজীবনেও আপনার মনোবাসনা পূর্ণ হবে না। তাই ‘ও বুঝবে’ এই আশায় না থেকে তাকে বুঝিয়ে দিন কেমনটা আপনি চাইছেন।

শেষ বেলায় বলি, দাম্পত্য সম্পর্ক কোনো গাণিতিক নিয়মে চলে না; যেটা অন্য সব সম্পর্কের বেলায়ও সত্য। তাই সবকিছু যে সবার বেলায় খাটবে তেমনটা ভাবা ঠিক নয়। তবে একটা খাঁটি কথা হলো সব ঝামেলার পরও যদি আপনার স্বামী/ স্ত্রী বোঝেন যে আপনি তাকে ভালবাসেন তাহলে কোনো সমস্যাই আর বড় হয়ে দাঁড়াবে না। কিন্তু এর জন্যে কেবল মনে মনে ভালবাসলেই হবে না, প্রকাশটাও খুব জরুরি। তাই একটা সহজ উপায় হলো দিনে অন্তত একবার উনাকে বলুন, “আমি তোমাকে ভালবাসি”।