কেন এখন আরো বেশি বেশি দান করতে হবে?

কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রভাবে আপনার উপার্জন হয়তো কিছুটা কমে গেছে। তাই ব্যয় সংকোচনে হয়তো ভাবছেন দান কমানোর কথা।

কিন্তু আপনি কি জানেন, এখন দান অব্যহত রাখাটাই আপনার জন্যে সবচেয়ে দরকারি?

কারণ দান দারিদ্র মোচন করে, সম্পদে বরকত আনে। রিজিকে প্রবৃদ্ধির জন্যেই দান জারি রাখতে হবে।

আসলে যারা এখন দান কমাবার কথা ভাবছেন তাদের ধারণা, যে দান করলে সম্পদ কমে যায়।

এটা ভুল!

আল্লাহর সাহায্য পেতে আপনিও প্রতিদিন সামর্থ্যের মধ্যে সাধ্যমত দান করুন

কারণ পরিমাণ নয়, আল্লাহ সবসময়ই দেখেন দাতার আন্তরিকতা আর গ্রহীতার প্রতি মমত্ববোধ।

এটা নিয়েও সুন্দর একটি ঘটনা আছে।   

খেজুর বাগানের পাহারাদার এক হাবশি ক্রীতদাস। খেজুর গাছের ছায়ায় বসেছে দুপুরের খাবার খেতে। খাবার বলতে তিনটি শুকনো রুটি।

রুটির টুকরো ছিঁড়ে মুখে দেবে, এমন সময় একটা কুকুর হাঁপাতে হাঁপাতে তার সামনে এসে বসল। ক্রীতদাস রুটির টুকরোটা নিজে না খেয়ে কুকুরটাকে দিল। কুকুরটি সেটা তৃপ্তির সাথে খেল।

ক্রীতদাস রুটির বাকি অংশটুকুও কুকুরকে দিল। কুকুর তাও খেয়ে ফেলল।

পরের রুটি এবং তার পরের রুটি- এভাবে একে একে তিনটি রুটিই সে ক্ষুধার্ত কুকুরটিকে খেতে দিল।

এ-দিকে পাশের খেজুর গাছের ছায়ায় বসে সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে জাফর দেখছিলেন সবকিছুই। ক্রীতদাসের দানশীলতায় মুগ্ধ হলেন তিনি।

তিনি নিজে দানশীল ছিলেন। কিন্তু এবারে তিনি অনুভব করলেন, এই ক্রীতদাস তার চেয়েও দানশীল!

কতটা দানশীল হলে কেউ নিজের ভাগের সবটুকু খাবার একটি কুকুরকে দিয়ে দিতে পারে, আর নিজে দিন কাটাতে পারে শুধু পানি পান করে!   

তিনি সেই ক্রীতদাসসহ খেজুর বাগানটা কিনে ফেললেন। তারপর ক্রীতদাসকে আজাদ করে দিলেন এবং উপহার হিসেবে বাগানটি তাকে দিয়ে দিলেন।

ক্রীতদাসের সামর্থ্য ছিল মাত্র তিনটি রুটি। কিন্তু সেটাই যখন উজাড় করে দিলেন, বিনিময়ে নিজে তো মুক্ত হলেনই, সেই সাথে মালিক হলেন একটি খেজুর বাগানেরও।

আসলে দানের বিস্ময়কর প্রতিদানের এই কাহিনীগুলো বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়

বরং কোরআনে আল্লাহ্‌-প্রদত্ত অঙ্গীকারেরই ফলিতরূপ এগুলো।

সূরা হাদিদের ১৮ নং আয়াতে তিনি বলছেন,

দানশীল পুরুষ ও নারী, যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে (শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে অন্যের জন্যে ব্যয় করে), তাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে বহুগুণ এবং তাদের জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার।

আর সূরা বাকারার আয়াত ২৪৫ -এ উল্লেখ আছে,

তোমাদের মধ্যে কে আল্লাহকে 'কর্জে হাসানা' (অর্থাৎ উত্তম ঋণ) দেবে? আল্লাহ বহুগুণ প্রবৃদ্ধিসহ তা ফেরত দেবেন। আল্লাহই মানুষের রিজিক বা জীবনোপকরণ কমান এবং বাড়ান।

আসলে পবিত্র কোরআনে উদ্বৃত্ত সম্পদ থেকে দান করতে বলা হয় নি, বলা হয়েছে প্রাপ্ত রিজিক থেকে দান করতে। রিজিক যেহেতু প্রতিদিনই আসছে তাই দানও করতে হবে প্রতিদিনই, যতটুকু সামর্থ্য আছে ততটুকুর মধ্যেই।

তাই দান করুন আন্তরিকতার সাথে, সমমর্মিতার সাথে।

আর্থিক সংকটের মুহূর্তেও এই দানের অসিলায় হয়তো স্রষ্টা আপনার অভাব মোচন করবেন, দেবেন উপার্জনে প্রবৃদ্ধি।

কেমন হওয়া উচিত দান?

আসলে দান করুণা বা দয়া হওয়া উচিত নয়। কারণ করুণা বা দয়ার মধ্যে একটা তাচ্ছিল্য থাকতে পারে।

বরং দানটাকে সবসময় বঞ্চিতের অধিকার হিসেবে মনে করতে হবে, যে আমি তার হক আদায় করছি। আল্লাহ এতে খুশি হবেন। এটা মনে করতে পারলে খুব আনন্দিতচিত্তে আপনি দিতে পারবেন।

অর্থাৎ যখন দেবেন আন্তরিকভাবে দেবেন। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়া দেবেন। আলাদা একটা তৃপ্তি পাবেন।

আর দানটা অবশ্যই হতে হবে শর্তহীন, গ্রহীতার কাছে প্রতিদানের প্রত্যাশাবিহীন।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- দান কীভাবে করব? কতটা করব? সূরা বাকারায় ২১৯ নম্বর আয়াতে এর উত্তর আল্লাহতায়ালা খুব পরিষ্কারভাবে দিয়েছেন।

তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, আল্লাহর পথে কী ব্যয় করব? বলো, 'প্রয়োজনের অতিরিক্ত' (সবকিছুই ব্যয় করতে পারো)।

অর্থাৎ, আপনার প্রয়োজন পূরণের পর যা থাকে তার সবকিছুই আপনি দান করতে পারেন। অবশ্য এই প্রয়োজন মানে প্রকৃত অভাব বা চাহিদা, বিলাসিতা বা অপচয়-অপব্যয় নয়।

আর দান সবসময় হওয়া উচিত আনুপাতিক হারে। আয়ের কমপক্ষে দশ শতাংশ হওয়া উচিত দানের পরিমাণ। তবে ২০ শতাংশ হলে আরো ভালো। ৩০ শতাংশ হলে আরো ভালো।

কেন ভালো? কারণ তা আপনার পরকালের পাথেয়। যতটুকু পাথেয় আপনি চান ততটাই তো দান করবেন!

আসলে এই নশ্বর পৃথিবীতে যা আপনি ব্যয় করলেন, সেটা তো শেষ! আর দান না করে যা জমিয়ে রাখলেন আপনি মারা যাওয়ার পর সেটার মালিক আপনার ওয়ারিশরা।

তারা সেটা ভালো পথে ব্যয় করলে আপনি সেখান থেকে কল্যাণ পাবেন। আর যদি সেটা ভালো পথে ব্যয় না করেন তো এটা আল্লাহই ভালো বলতে পারেন তা আপনার জন্যে কী পরিণাম বয়ে আনবে।

কিন্তু যা আপনি দান করলেন সেটাই আপনার। পরলোকের অনন্তকালের জীবনে সেটাই আপনি ভোগ করতে পারবেন যা আপনি এখন দান করবেন।