published : ৫ এপ্রিল ২০২২
রমজান এলেই রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে ভিখারীদের যেন ঢল নামে! পবিত্র এই মাসে দানের প্রতিদান অনেক বেশি বলেই আমরা চেষ্টা করি সাধ্যমতো দান করতে। কিন্তু যাদের আমরা দান করি আসলেই কি তারা দান গ্রহণের হকদার?
সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজধানীতে বর্তমানে ভিক্ষুকের সংখ্যা অন্তত ৩ লক্ষ। নির্ভরযোগ্য কোনো জরিপ না থাকলেও সমাজবিদদের ধারণা সারা দেশে এ সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ। এদের একটি বড় অংশের ক্ষেত্রেই ভিক্ষাবৃত্তি একটি লাভজনক বাণিজ্য, যেখানে রয়েছে বিনা পুঁজিতে অর্থ উপার্জনের দেদার সুযোগ।
বলবেন ভিক্ষাবৃত্তি বাণিজ্য হয় কী করে?
আসলে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে যেমন সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব রয়েছে তেমনটা রয়েছে ভিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও। দোকান ভাড়ার মতো তাদেরকেও দিতে হয় ভিক্ষা করার জায়গার ‘ভাড়া’!
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিকলাঙ্গ-প্রতিবন্ধী, শিশু ও বয়োঃবৃদ্ধ নারী-পুরুষদের এনে ভিক্ষা করাচ্ছে এরা। সিন্ডিকেটের সদস্য না হয়ে ভিক্ষা করতে পারে না কেউই।
কে কোথায় বসে ভিক্ষা করবে তাও নির্ধারণ করে সিন্ডিকেট, যাদেরকে দিতে হয় ভিক্ষাবাবদ উপার্জনের একটি অংশ। যেসব স্থানে ভিক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি সেসব স্থানের ‘ভাড়ার’ পরিমাণও বেশি!
নিয়মিত ভিক্ষুকের পাশাপাশি প্রায় ৫০ হাজার মৌসুমী ভিক্ষুক রাস্তায় নামে শবে বরাত, রমজান, শবে কদর ঈদকে টার্গেট করে। কিছু ভিক্ষুক শুধুমাত্র শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় মসজিদ ও কবরস্থানের গেটে ভিক্ষার জন্যে বসে।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দূরদূরান্ত থেকে এদের এনে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হয় পার্টটাইম ভিক্ষার কাজে।
এমনিতে প্রতিদিন রাজধানীতে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ভিক্ষাবাণিজ্য হলেও এই বিশেষ দিনগুলোতে উপার্জনের পরিমাণ বেড়ে যায় বহুগুণ।
আপনি যাকে দেখে বিকলাঙ্গ ভাবছেন অনেক ক্ষেত্রেই সে শারীরিকভাবে কর্মক্ষম। গড়িয়ে গড়িয়ে ভিক্ষার থালা বয়ে চলা লোকটি হয়তো স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করতে পারে।
‘মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকা’ লোকটিই হয়তো বাস করে ভাড়া বাসায়!
অসহায় বিকলাঙ্গ-পঙ্গু বা অটিস্টিক শিশু কোলে যে নারীকে দেখে আপনার মায়া হয় সেই সন্তানটি হয়তো তারই না!
সামনে ভিক্ষার থালা রেখে স্ট্রিট ল্যাম্পের আলোয় মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে কোরআন পড়ছে যে ব্যক্তিটি জিজ্ঞেস করলে দেখবেন সে হয়তো আরবি পড়তেই জানে না!
পত্রিকার অনেক রিপোর্টেই আপনি এই বাস্তবতার দেখা পাবেন।
ভিক্ষা চাইতে আসা এক লোককে নবীজী (স) জিজ্ঞেস করেছিলেন তার বাসায় কী আছে। জবাবে লোকটি বললো তার কাছে গায়ে দেয়ার একটি কম্বল আর একটি পানিপান পাত্র আছে। নবীজীর (স) কথামতো লোকটি সেগুলো নিয়ে এলে তিনি সেটিকে দুই দিরহামে বিক্রি করলেন। তাকে এক দিরহাম দিলেন পরিবারের জন্যে খাবার আর আরেক দিরহাম কুঠার কিনতে।
লোকটি কুঠার নিয়ে এলে নবীজী (স) নিজ হাতে সেটাতে হাতল লাগিয়ে বললেন- যাও, কাঠ কেটে বিক্রি করো। পনেরো দিন যেন তোমাকে না দেখি!
লোকটি কাঠ কেটে বিক্রি করতে লাগল। কিছুদিন পর সে যখন নবীজীর (স) নিকট আসলো তখন তার উপার্জন দশ দিরহাম! নবীজী (স) বললেন, ভিক্ষা করে বেড়ানোর চেয়ে এ কাজ তোমার জন্যে অধিক উত্তম।
ঘটনাটি হয়তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু এর তাৎপর্য আমরা বিবেচনা করি একপাক্ষিকভাবে। মানে ভিক্ষা করা যে অনুচিত সেটা আমরা বুঝি। অথচ ভিক্ষাদাতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমরা বুঝতে পারব কাউকে ভিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তিকে উৎসাহিত করার বদলে আমাদের উচিৎ তাকে আত্মনির্ভরশীল হতে উদ্বুদ্ধ বা সহায়তা করা।
নবীজী (স) ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করেছেন- এমন হাদিস আছে বহু। কেবল বলেই ক্ষান্ত হন নি, অন্যকে কীভাবে স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতে হয় সেটা তিনি দেখিয়েছেন হাতে-কলমে। জীবিকা হিসেবে ভিক্ষাগ্রহণ যেহেতু শরিয়তে নিরুৎসাহিত, কাজেই সওয়াবের আশায় যাকে-তাকে ভিক্ষা প্রদানও শরিয়তসম্মত নয়।