published : ২০ এপ্রিল ২০২৫
প্রার্থনা সৌভাগ্য বয়ে আনে। আর যখন নিজের জন্যে প্রার্থনার পাশাপাশি অন্যের জন্যেও প্রার্থনা করা হয় তখন প্রাকৃতিক নিয়মেই এই সৌভাগ্য হয় আরও ত্বরান্বিত।
স্রষ্টা মহান, তিনি মহানুভবতা পছন্দ করেন। একজন ব্যক্তি, যে দিনরাত প্রার্থনা করে, কিন্তু তার প্রার্থনা হয় শুধু নিজের চাহিদা পূরণের জন্যে, সে কখনোই স্রষ্টার কাছ থেকে সেই ব্যক্তির মতো সম্মান লাভ করতে পারবে না, যে নিজের পাশাপাশি অন্যের প্রয়োজন পূরণের জন্যেও স্রষ্টার দরবারে দু’ হাত তোলেন।
প্রকৃতির প্রতিদান প্রথমে নিজের দিকেই ফিরে আসে। তেমনি অন্যের জন্যে কল্যাণ কামনাও প্রথমেই নিজের দিকে আসে। এটাই হচ্ছে ল’ অফ ন্যাচারাল রিটার্ন বা প্রকৃতির প্রতিদান।
যখন আপনি অন্যের জন্যে প্রার্থনা করবেন, প্রকৃতি আপনাকে খারাপ থাকতে দেবে না। নানা বাধা প্রতিবন্ধকতা, দুঃখ-কষ্ট আসতে পারে, কিন্তু তা আপনাকে ভাঙতে পারবে না। সবকিছুর মাঝেও অটুট থাকবে আপনার অন্তরের প্রশান্তি।
প্রতিদানের প্রত্যাশা ছাড়া মনোযোগ ও মমতা দিয়ে অন্যের জন্যে দোয়া করা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ, আল্লাহর প্রিয় কাজ। আর আল্লাহর এই প্রিয় কাজটি করে আপনি অন্তরে যে প্রশান্তি লাভ করবেন, তা অন্য কোনো মাধ্যমে লাভ করা সম্ভব নয়।
একজন মানুষ যত অর্থবান বিত্তবান ক্ষমতাবানই হোক না কেন, তিনি কখনোই সেই মর্যাদা লাভ করতে পারেন না যা একজন পরোপকারী উদারমনা মানুষ পারেন। যুগে যুগে কালে কালে পৃথিবী তাদেরকেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, যারা পরের কল্যাণে জীবনকে উৎসর্গ করেছেন।
তবে পরের কল্যাণ কামনা করার মহানুভবতা ও সামর্থ্য রাতারাতি জন্মায় না। এটা একটা জীবনাচার, একটা অভ্যাস। এই অভ্যাস আপনি আজ থেকেই গড়ে তুলতে পারেন।
আপনি যে ধর্ম-বর্ণ-গোত্রেরই হোন না কেন, আপনার রোজকার প্রার্থনায় নিজের চাওয়াগুলোর পাশাপাশি অন্যদের চাওয়াগুলোও সংযোজন করুন। পৃথিবীর নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষদের মুক্তির জন্যে দোয়া করুন। আপনার স্বজন পরিজন বন্ধুবান্ধব প্রতিবেশীদের কল্যাণ কামনা করুন। কেউই হয়তো দেখবে না। কিন্তু স্রষ্টা তো দেখবেন! তিনি আপনার ভেতরের কল্যাণ শক্তিকে আরও বাড়িয়ে দেবেন, আপনার ভেতরে মহানুভবতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
প্রার্থনার মাধ্যমে যে-কোনো অসম্ভব সম্ভব হতে পারে। আপনি জানেন না আপনার কোন প্রার্থনা স্রষ্টা কখন কবুল করে ফেলবেন।
আপনার প্রতিবেশী পরিবার হয়ত অশান্তি, কলহে জর্জরিত ছিল। আপনি পরিবারটার জন্যে দোয়া করলেন। হতে পারে স্রষ্টা আপনার প্রার্থনার মাধ্যমেই তাদের অশান্তি দূর করে দিলেন।
আপনার পরিচিত এক ক্যান্সার রোগীর জন্যে রোজ দোয়া করেন। হয়ত তিনি একটা সময় ক্যান্সার থেকে পুরোপুরি নিরাময় লাভ করলেন। আপনি বুঝতেও পারলেন না যে স্রষ্টার আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলেন, আপনার উসিলায় তিনি রোগীকে এই নিরাময় দান করেছেন।
আপনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। দেখলেন একজন সবজি বিক্রেতা, তীব্র রোদে দাঁড়িয়ে ঘর্মাক্ত শরীরে কার্টে করে সবজি বিক্রি করছেন। আপনি মনে মনে তার জন্যে দোয়া করলেন। দোয়া করে আপনি চলে গেলেন, হয়তো ভুলেও গেলেন। কিন্তু আপনার দোয়াটা কবুল হয়ে গেল। সবজি বিক্রেতার বিক্রিতে বরকত এসে গেল, সে বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠল।
নবীজী (স) বলেছেন, যখন কোনো বিশ্বাসী অপর বিশ্বাসী ভাইয়ের জন্যে তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করে, তখন তা কবুল হয়। সে যখনই অন্যের জন্যে দোয়া করে তখন সেখানে উপস্থিত ফেরেশতা তার সাথে ‘আমিন’ বলে এবং বলে, ‘তোমারও এরকম কল্যাণ হোক’। —আবু দারদা (রা); মুসলিম
এই ফিরতি কল্যাণ দৃশ্যমান হতে পারে, আবার অদৃশ্যও হতে পারে।
সেটা কেমন?
ধরুন আজ সকালে হয়তো অফিসে যাওয়ার পথে বাসের নিচে আপনার পা চাপা পরত। কিন্তু সকালেই আপনি কারো জন্যে দোয়া করেছেন। আপনার দোয়া প্রকৃতির ভাণ্ডারে থেকে গেছে। আল্লাহ আপনাকে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
নিয়মিত যখন অন্যের কল্যাণ আপনি কামনা করেন, তখন তা আপনার ভেতরের কল্যাণ শক্তিকে বিকশিত করতে থাকে। আপনি তখন লাভ করেন সুখ শান্তি প্রাচুর্য।
আসলে প্রাচুর্য বলতে আমরা ব্যাংক ব্যালেন্স, ফ্ল্যাট বাড়ি গাড়ি ভাবি। কিন্তু আপনি কয়েক লাখ টাকা বেতন পেলেন, অথচ আপনার পরিবারে চাহিদা মিটছে না, মাস শেষে ঋণ হয়ে যাচ্ছে- এটা প্রাচুর্য হতে পারে না। অপরদিকে কম আয়েও যদি আপনার ও পরিবারের সকল চাহিদা সুন্দরভাবে পূরণ হয়ে যায় তাহলেই সেটা প্রাচুর্য।
আসলে শুধু অর্থ উপার্জনই নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রাচুর্য লাভের সুযোগ আছে। অন্যের কল্যাণ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে আপনার জীবনে ক্রমাগত যোগ হতে থাকে এই প্রাচুর্য।
যখন যতটুকু সম্ভব ততটুকুই করুন। পরার্থে প্রার্থনাকে পরিণত করুন প্রাত্যহিক জীবনের অংশে। পরিচিত-অপরিচিত যারই প্রয়োজন মনে করছেন তার জন্যে দোয়া করুন। প্রার্থনা করতে শেখান আপনার সন্তানকেও।
আপনি আজ প্রার্থনার মাধ্যমে যার পাশে দাঁড়ালেন, দেখবেন আপনার প্রয়োজনের সময় এমন কেউ আপনাকে হয়তো সাহায্য করতে চলে আসবে যাকে আপনি কখনো দেখেন নি, হয়তো পরে কখনো দেখবেনও না। কারণ স্রষ্টা কোনো ভালো কাজ কখনো বিফলে যেতে দেন না। আপনি যখন মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, তখন স্রষ্টা স্বয়ং আপনার পাশে থাকবেন।
ধ্যানের স্তরে একাগ্রচিত্তে যে প্রার্থনা করা যায়, ধ্যান ছাড়া সে একাগ্রতা আনা কঠিন। এ-জন্যেই কোয়ান্টাম হিলিং, যার মাধ্যমে মেডিটেশন চর্চাকারীরা অন্যের জন্যে প্রার্থনা করেন।
কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে অংশগ্রহণকারীরা মেডিটেশনের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক ও বৈষয়িক সমস্যামুক্তিতে কমান্ড সেন্টার প্রয়োগ শেখেন। এই কমান্ড সেন্টারের মাধ্যমেই হিলিং তথা প্রার্থনা করেন কোয়ান্টাম সদস্যরা।
অনেকেই হিলিং কার্ডে সমস্যা বা কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের বিবরণ লিখে সদকা হিলিংয়ে নাম দেন। এই কার্ডের মাধ্যমে হিলিংকারীরা তাদের কল্যাণে প্রার্থনা করে থাকেন। এখন পর্যন্ত এরকম হিলিং জমা পড়েছে প্রায় ৮৬ লক্ষ! হিলিংয়ে যে কাজ হয় এই পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ।