শুধু খেলেই কি মোটা হওয়া যায়?

আজ ৪ মার্চ, ওয়ার্ল্ড অবেসিটি ডে বা বিশ্ব স্থূলতা দিবস। স্থূলতা দিবসে স্থূলতাকে কমানো নিয়েই কথাবার্তা বেশি হয়। আর তা খুবই বাস্তবসঙ্গতও। কিন্তু খুব বেশি ভগ্নস্বাস্থ্য, ওজন বাড়াতে চান স্থূল হতে চান- এমনদের দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত 

উচ্চতা অনুপাতে 'মোটা' নয় বলে হীনম্মন্যতায় ভোগেন অনেকেই। এর একটি কারণ হলো চিকন বা শীর্ণকায় হওয়াটাকে আমাদের সমাজে স্বাস্থ্যহীনতা বলে গণ্য করা হয়। কাজেই মোটা হওয়ার বাসনায় প্রচুর খাওয়া-দাওয়ার দিকে ঝুঁকতে দেখা যায় অনেককেই। কিন্তু কোটি টাকার প্রশ্ন হলো- শুধু খেলেই কি আপনি মোটা হতে পারবেন?

মহিষ ও ব্যাঙের গল্প

মহিষের সাথে ঝগড়া হয়েছে ব্যাঙের। ব্যাঙ বেশ বুঝেছে আকার-আকৃতিতে বিশাল বপু মহিষকে গায়ের জোরে সে হারাতে পারবে না। সে ঠিক করে মহিষের মতো মোটাতাজা হয়ে তবেই সে যুদ্ধে নামবে! এরপর থেকে সে বেশি বেশি খায় আর মহিষের পাশে গিয়ে মেপে দেখে কতটা মোটা সে হয়েছে।

কিছুদিনের মধ্যে ব্যাঙটি ফুলেফেঁপে উঠলো বটে, কিন্তু মহিষের সমান তো দূর, গায়ে পায়ে তার ধারেকাছেও নেই। সে খাওয়া-দাওয়া আরো বাড়িয়ে দিল। একটা পর্যায়ে ফোলানো বেলুনের মতো হলো তার অবস্থা। নড়াচড়া করতে পারেনা, দমটা পর্যন্ত স্বস্তিতে নিতে পারে না। এই করে করে একদিন সে মারাই গেল।

গল্পের শিক্ষা

নিছক এই গল্পের ভেতরেও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা। আসলে আপনি কতটা চওড়া বা প্রশস্ত হবেন তা কেবল খাওয়া-দাওয়ার ওপর নির্ভর করে না। আপনার দেহকাঠামোই বলে দেবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি কতটা চিকন বা মোটা হবেন।

হালকা-পলকা শরীর নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগাদের অনেকেই ভুলটা করে ফেলে এখানেই। মনে করে ‘স্বাস্থ্যবান’ হতে হলে প্রচুর খেতে হবে। ‘অমুক’ ব্যাক্তি কী খেয়ে কত অল্পদিনে মোটা হয়েছে তা জেনে শুরু করে তার মতোই খাওয়া-দাওয়া। কিন্তু শরীরের কাঠামো সেই ‘অমুকের’ মতো না হলে ভরপুর খাওয়া-দাওয়ায় তার মতো স্বাস্থ্যবান হওয়ার বদলে সে কেবল মেদস্থূলই হবে। মাঝখানে ফুলেফেঁপে দশা হবে গল্পের ব্যাঙের মতোই করুণ।

সোমাটোটাইপ (Somatotype) তত্ত্ব অনুসারে শরীর কাঠামো তিন ধরণের হয়ে থাকে-

১. একটোমর্ফ (Ectomorph) : এ-ধরণের মানুষ লম্বা ও শীর্ণকায় এবং সরু দেহকাঠামোর অধিকারী হয়ে থাকে। বিপাকক্রিয়া দ্রুত হয় বলে এদের ওজন সহজে বাড়ে না। প্রচুর খাওয়ার পরও তেমন একটা মোটা নয়- এমন যাদের দেখে আপনি অবাক হন তাদের রহস্যটা আসলে এখানেই।

২.এন্ডোমর্ফ(Endomorph) : একটু গোলগাল আর বৃহদাকার শরীর কাঠামোর কারণে এদের ওজন বাড়ার একটি সহজাত প্রবণতা আছে। শরীরচর্চা না করলে এদের ওজন দ্রুত বাড়তে পারে, তবে পেশীর বদলে বেশি বাড়ে চর্বি। ফলে তুলনামূলক কম খাওয়ার পরও এদের শরীর হয় থলথলে, মেদবহুল।

৩. মেসোমর্ফ (Mesomorph) : এদের দেহকাঠামো একটোমর্ফ ও এন্ডোমর্ফদের মাঝামাঝি।একটোমর্ফদের চেয়ে এদের ওজন বাড়ে দ্রুত এবং এন্ডোমর্ফদের চেয়ে এরা সহজে ওজন কমাতে পারে। 

অতএব বুঝতেই পারছেন আপনি কতটা চিকন বা মোটা হবেন তা কেবল খাদ্যগ্রহণের ওপর নির্ভর করে না

বরং তা অনেকাংশেই নির্ভর করে দেহকাঠামো কেমন তার ওপর। কাজেই ওজন বাড়ানো কিংবা মেদ ঝরানোর যে ডায়েট আপনি নিজের জন্যে গ্রহণ করবেন তা অবশ্যই একজন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ বা দক্ষ ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ মোতাবেক হতে হবে। অন্যথায় কেবল খাদ্য নিয়ন্ত্রণ আপনাকে কাঙ্ক্ষিত গড়ন প্রদানের পরিবর্তে হতে পারে শারীরিক ক্ষতির কারণ।