বন্ধুত্বের সীমানা পেরিয়ে যখন প্রেম

published : ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বন্ধুত্ব–খুব ছোট্ট একটি শব্দ কিন্তু একজন মানুষের জীবনে রয়েছে এর গভীর প্রভাব। এই শব্দটির সঙ্গে পরিচয় ঘটে খুব ছোটবেলাতেই। স্থান কাল পাত্র ভেদে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে অনেকের সঙ্গেই। কিন্তু এই বন্ধুত্ব যদি হয় ছেলে মেয়ের মধ্যে—তবে আদৌ কি এই সম্পর্ক টিকে থাকে নাকি সীমানা পেরিয়ে মোড় নেয় অন্য সম্পর্কে?

আসলে তারুণ্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি একটি প্রবল আকর্ষণ কাজ করে থাকে। যার কারণ জৈবিক ও রাসায়নিক। অনেক সময়ই ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে একে বন্ধুত্ব মনে করতে চায়। আসলে বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক যার ভিত্তি হলো চেতনা। চেতনার বাইরে যে বন্ধুত্ব সেটা প্রয়োজনের। আর এ সম্পর্ক প্রয়োজনের সম্পর্ক।

সাধারণত বন্ধুত্ব করার সময় আমরা লিঙ্গ বিবেচনা না করে প্রাধান্য দেই ব্যক্তিকে। কিন্তু দেখা গেছে সঙ্কটমুহূর্তে একজন ছেলে পরামর্শের জন্যে খোঁজ করে তার মেয়ে বন্ধুটিকে। একইভাবে একজন মেয়েও তার ছেলে বন্ধুকে তুলনামূলকভাবে বেশি বিশ্বস্ত বা ভরসাপাত্র মনে করে।

এমন কথাও প্রচলিত আছে যে, বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুকে কোনো দুঃসময়ের কথা বোঝানোর জন্যে একটি শব্দ উচ্চারণই যথেষ্ট।

হাবপেজ ‘হাউ টু ব্যালেন্স বিটুইন লাভ এন্ড ফ্রেন্ডশিপ’ নামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে আমেরিকার একটি ইউনিভার্সিটি ১৮ থেকে ৫২ বছর বয়সী গ্রুপের ৪শ’জন মানুষের মধ্যে একটি গবেষণার কথা বলা হয়। গবেষণার বিষয় বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে বন্ধুত্ব।

এখানে বলা হয় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরণের বন্ধুত্ব কখনোই শেষ পর্যন্ত নির্মল সম্পর্কে গড়ায় না। সম্পর্কের কোনো এক পর্যায়ে এখানে এক পক্ষ অপর পক্ষের প্রতি অধিক মনোযোগী বা আবেগপ্রবণ হতে শুরু করে এবং একসময় প্রেম নিবেদন করে।

বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আর্কষণ বিষয়ে আমেরিকার নিউ ইয়র্কের ভ্যালি স্ট্রিমের মনোবিজ্ঞানী লিন্ডা সাপাডিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ধারণা করা হয়, অনেক যুগ আগে নারীরা ঘরে থাকত আর পুরুষরা বাইরে কাজ করত। একমাত্র মিলনের সময়ই পুরুষরা ঘরে আসত’।

অর্থাৎ একটি তরুণ ও তরুণীর মধ্যে এই ঘনিষ্ঠতা কখনোই স্রেফ বন্ধুত্বে সীমিত থাকে না। তা হয় যৌনতা না হয় প্রেমে রূপান্তরিত হয়। আর এটাই বাস্তব সত্য।

ছেলে মেয়ের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণের ফলেই নিষ্কাম বন্ধুত্ব যে আদৌ সম্ভব নয়—একই মত প্রকাশ করেছে সাইন্টিফিক আমেরিকান ডট কম এ ‘মেন এন্ড ওমেন কান্ট বি জাস্ট ফ্রেন্ডস’ বিষয়ক প্রতিবেদনটি।

এজন্যে দেখা যায়, সহপাঠী বা বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রেমের সম্পর্ক গড়ার প্রবণতা খুব বেশি। পড়াশুনায় মনোযোগী হওয়ার পরিবর্তে প্রেমে জড়িয়ে পড়াকে তারা মনে করেন জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। আর এই প্রেমই একজন ছাত্রছাত্রীর সম্ভাবনাকে পুরোপুরি নষ্ট করে দিতে যথেষ্ট।

আসলে সহপাঠীদের মধ্যে সুসম্পর্ক রাখা বাঞ্ছনীয়। তারা যদি ছেলে-মেয়ে হয় এবং সীমার মধ্যে থেকে তারা যদি সুসম্পর্ক রাখতে পারেন, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই।

কিন্তু সমস্যা হয় সেখানেই। আপনি হয়তো বন্ধু ভাবছেন কিন্তু সে ভাবছে বন্ধুর চেয়ে একটু বেশি। আপনি সুযোগ নিতে চাচ্ছেন না কিন্তু সে যে সুযোগের অসৎ ব্যবহার করবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

যেমন, আপনি বলছেন, নির্দিষ্ট সীমার ভিতরে দেখা করবেন, ঘুরতে যাবেন। ধরুন, আপনি আপনার ছেলেবন্ধুর সাথে কক্সবাজারে ঘুরতে গেলেন, এক হোটেলে থাকলেন, কতক্ষণ সীমা বজায় রাখতে পারবেন। মুনিগণ ধ্যান ভাঙ্গি তব পদে দেয় তপস্যা ফল। মুনিরা যেখানে ব্যর্থ হয়েছেন সেইখানে সাধারণ মানুষের পক্ষে সাফল্যের সম্ভাবনা খুব কম।

আসলে এই যে, ছেলেবন্ধু বা মেয়েবন্ধু এগুলো আমাদের সংস্কৃতিজাত ধারণা নয়, এগুলো হলো পাশ্চাত্য সংস্কৃতি। সেখানে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড তাদেরকে বলা হয় যাদের সাথে বিয়ে ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক থাকে। এই যেমন ডেটিং এ যাওয়া। ডেটিং এ কিন্তু কোনো স্বামী-স্ত্রী যায় না। ডেটিংয়ে যায় গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ডরা। যার সাথে আমাদের সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক নেই। আজকাল যে এতো ছ্যাঁকা, ছেলে মেয়ের রেজাল্ট এত খারাপ হওয়া—এর পেছনে একটাই কারণ ছেলেবন্ধু মেয়েবন্ধু।

যাইহোক, বিপরীত লিঙ্গের সহপাঠী বা সহকর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক অবশ্যই থাকবে কিন্তু সেটা হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে এবং সম্পর্কের মধ্যে নির্দিষ্ট সীমারেখা মেনে চলার মাধ্যমে। আর শিক্ষাজীবনে এবং কর্মস্থলে নিজের মেধাকে বিকশিত করতে চাইলে, জীবনে বড় কিছু করার ইচ্ছা থাকলে—এই সাময়িক ভালো লাগা ও মোহ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। জীবনে সাফল্যের সোপানে যখন পা রাখবেন, তখন দেখবেন আপনার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে বিপরীত লিঙ্গের লাইন পড়ে গেছে।

রেফারেন্স:

http://mellyunplugged.hubpages.com/hub/Friendship-Vs-Love

http://bangla.bdnews24.com/lifestyle/article701194.bdnews

https://www.scientificamerican.com/article/can-men-and-women-be-just-friends1/