published : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের জীবনের একটি ঘটনা। ১৯৭৮ সালে ক্রিসমাসের ঠিক আগে সপ্তাহখানেকের জন্যে রাষ্ট্র পরিচালনার মতো গুরুদায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিতে বাধ্য হন তিনি। কারণ কী ছিল জানেন? পাইলস!
অনেকের জীবনের একটি বিড়ম্বনার নাম এই হেমোরয়েড, পাইলস বা অর্শ রোগ। বয়স পঞ্চাশের কোটায় যেতে না যেতেই শতকরা ৫০ ভাগ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন- এমনটাই বলা হয়েছে হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ের একটি নিবন্ধে।
হেমোরয়েডস বা পাইলস নামগুলো সাধারণভাবে রোগ বোঝাতে ব্যবহৃত হলেও আসলে এটা পায়ুপথের শেষাংশে থাকা এক ধরণের রক্তনালীগুচ্ছের সাধারণ নাম। বৃহদান্ত্রের শেষভাগে মলদ্বারের ভেতরে ও বাইরে থাকা কুশনের মতো এই রক্তনালীগুচ্ছ বা জালিকা প্রয়োজনমত সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হয়ে মলত্যাগে সহায়তা করে। পাইলস বা অর্শ রোগ হলো এই রক্তনালীগুচ্ছের প্রদাহ ও সংক্রমণ।
রোগটিকে আমরা প্রচলিত শব্দে যদি পাইলস নামে অভিহিত করি তাহলে এর কারণ নেহায়েত কম নয়! দীর্ঘদিনের কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য, পুরনো ডায়রিয়া, মেদস্থূলতা, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, আঁশযুক্ত খাবার কম এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়া- মূল কারণ এগুলোই।
প্রেগনেন্সি, বাড়তি ওজন বা অন্য কোনো কারণে মলত্যাগে বেশি জোরাজুরি করলেও পাইলস হতে পারে।
আর ঘন্টার পর ঘন্টা চেয়ারে বসে কাজ করতে যারা অভ্যস্ত পাইলসের উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন তারাও। যে-কারণে বেশিরভাগ সময় বসে কাজ করেন এমন চাকুরিজীবীদের মধ্যে রোগটি একটু বেশিই দেখা যায়।
প্রাথমিক যে অবস্থা পাইলসের জানান দেয় তা হলো মলদ্বার ও পায়ুপথে শিরা ফুলে যাওয়া বা গোটা বের হওয়া। ব্যথা বা অস্বস্তি না হওয়ায় পায়ুপথের ভেতরে পাইলস হলে তা বোঝা মুশকিল। তবে পায়ুর বাইরের দিকে পাইলস বোঝা সহজ। গোটা বের হওয়ার পাশাপাশি হতে পারে ব্যথা, চুলকানি ও রক্তপাতও।
পাইলসের ক্ষেত্রে শিরা ফোলাকে ৪টি পর্যায়ে ভাগ করা যায়।
প্রথম পর্যায়ে শিরা ফুলে গেলেও তা বাইরে বেরিয়ে আসে না। দ্বিতীয় পর্যায়ে শিরা মলত্যাগের সময় বাইরে বেরিয়ে এলেও তা আপনাআপনি ঠিক হয়ে যায়। তৃতীয় পর্যায়ে বেরিয়ে আসা শিরা নিজে নিজে ঠিক না হলেও হাত দিয়ে ঠিক করা যায়। চতুর্থ পর্যায়ে ফোলা শিরাকে আর আগের অবস্থায় ফেরানো যায় না।
প্রাথমিক অবস্থায় পাইলস তেমন একটা যন্ত্রণাদায়ক বা অস্বস্তিকর না হলেও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নিলে পাইলস বড় হয়ে ঘটাতে পারে নানাবিধ জটিলতা। যেমন- রক্তপাতের ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে, মলদ্বারের বাইরে থাকা ফোলা শিরায় ঘা হয়ে প্রচণ্ড ব্যথা ও চুলকানি হতে পারে। এমনকি ফোলা স্থানে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে জায়গাটি পচেও যেতে পারে।
তবে পাইলস থেকে কোলন বা রেক্টাল ক্যান্সার হয়- এমন একটি ধারণা প্রচলিত থাকলেও হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে পাইলস এই ক্যান্সারগুলো সৃষ্টি বা এগুলোর ঝুঁকি বৃদ্ধি কোনটিরই কারণ নয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাইলস নিজে থেকেই নিরাময় হয়, চিকিৎসা লাগে না। লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে সহজেই পাইলস নির্মূল সম্ভব।
স্টুল যত শক্ত হবে পাইলসের জন্যে তা ততো খারাপ। তাই স্টুল স্বাভাবিক হওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এজন্যে ফলমূল ও শাকসবজিসহ এমন খাবার খান যা অধিক আঁশসমৃদ্ধ। পান করুন পর্যাপ্ত পানি। ঝরিয়ে ফেলুন বাড়তি ওজন।
তবে এতেও যদি কাজ না হয় বা অবস্থা জটিল রূপ ধারণ করে তাহলে মেডিকেল ট্রিটমেন্ট নিন।
পাইলস প্রতিরোধে সুস্থ খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনাচার জরুরি। এজন্যে কিছু করণীয়-বর্জনীয়ঃ
আসনগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে
বঙ্গাসন সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুন- চেয়ার ছাড়ুন, বঙ্গাসনের অভ্যাস গড়ুন