published : ২৮ এপ্রিল ২০১৮
নিতান্তই ছোটখাটো কোনো কারণে আজ হয়তো আপনি একটু অস্থিরতায় ভুগছেন, মানসিকভাবে চাপ বোধ করছেন। সবমিলিয়ে হয়তো কিছুটা স্ট্রেস-আক্রান্ত আপনার মন। জেনে রাখুন, এ যে কেবল আপনারই ক্ষতি করছে তা নয়, এর প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী-আপনার আজকের স্ট্রেস ভোগাতে পারে আপনার পরবর্তী প্রজন্মকেও!
ইঁদুরের ডিএনএ স্ক্যান করে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এ তথ্য দিয়েছেন। তাদের মতে, একজন মানুষের আজকের স্ট্রেস যে তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও ক্ষতির কারণ হতে পারে-এ গবেষণার ফলাফল তা-ই প্রমাণ করে। শুধু তা-ই নয়, পারিপার্শ্বিক নানা বিষয় যেমন ধূমপান, খাদ্যাভ্যাসের ধরন ইত্যাদির পাশাপাশি শৈশবের মানসিক চাপও একই রকম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
স্ট্রেস বা অন্য যে-কোনো কারণে ডিএনএ-তে যে কিছু ছাপ (Marking) থেকে যায়, তা সময়ের সাথে একসময় পুরোপুরি মুছে যায় অর্থাৎ শুক্রাণু ও ডিম্বাণু পূর্ণবয়স্ক হতে হতে তা মোটামুটি আগের অবস্থাতেই ফিরে আসে- এতদিন জিনবিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল এটাই। আর যদি তা না-ও হয়, তবে পরবর্তীকালে ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার সময় স্ট্রেস-এর কারণে সৃষ্ট প্রভাব ঠিকই মুছে যায়। কিন্তু একাধিক গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা এখন তাদের ধারণা পাল্টাতে শুরু করেছেন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেমি হ্যাকেট-এর নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা ও তথ্যানুসন্ধান করেন। জিন-এর প্রাথমিক পর্যায় থেকে পরিপূর্ণ হওয়ার প্রতিটি ধাপ তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা বলেন, খুব অল্প সংখ্যক জিন-এ শেষপর্যন্ত কিছুটা ছাপ বা চিহ্ন থেকেই যায়। সংখ্যাটা এমন-একটি জননকোষে থাকা ২৫,০০০ জিন-এর মধ্যে গড়ে প্রায় ২৩৩টি জিন-এ স্ট্রেস-এর প্রভাব রয়ে যেতে পারে। হ্যাকেট ও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মতে, বংশপরম্পরায় এর প্রভাব পড়তে পারে আপনার পরবর্তী প্রজন্ম অবধি।
পুরো প্রক্রিয়াটি কীভাবে ঘটে- সে বিষয়ে এখনো সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল হতে না পারলেও, যেটুকু বোঝা গেছে তাতে বিজ্ঞানীরা বেশ উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। জুরিখের সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-র গবেষক ইসাবেলা ম্যানসুই এ বিষয়ে তার দীর্ঘ গবেষণার পর বলেন, স্ট্রেস-এর প্রভাব চলতে পারে এমনকি পরবর্তী দুই প্রজন্ম পর্যন্ত।
তথ্যসূত্র : নিউসায়েন্টিস্ট
(২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩)