কেন আসবেন সাদাকায়নে?

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের নিয়মিত আয়োজন সাদাকায়ন। ১৯৯৫ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই কার্যক্রম। সারা দেশে দুই শতাধিক ভেন্যুতে প্রতি শুক্রবার একযোগে সকাল ৯-১০টা; কোথাও কোথাও সকাল ও বিকেল দুই সেশনে অনুষ্ঠিত হয় সাদাকায়ন কার্যক্রম।

সাদাকায়ন কী?

সাদাকায়ন শব্দটি এসেছে সাদাকা থেকে, যার অর্থ দান।

নিজের ও অন্যের কল্যাণে সাপ্তাহিক কার্যক্রম সাদাকায়ন, যা সব বয়সের সব পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত। এক ঘন্টার এই কার্যক্রমে কোয়ান্টাম গ্র্যাজুয়েট, প্রো-মাস্টার ও এসোসিয়েট সদস্যরা একত্র হয়ে মেডিটেশন করেন। থাকে বিষয়ভিত্তিক জীবনঘনিষ্ঠ আলোচনা। একেক সপ্তাহে একেক টপিকে আলোচনা উপস্থাপন করেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় বাণীবাহকেরা। আর প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার থাকে শ্রদ্ধেয় গুরুজীর অডিও আলোচনা।

এছাড়াও থাকে নিজের ও অন্যের কল্যাণে হিলিং প্রার্থনা, স্বাস্থ্য ও শুদ্ধাচার টিপস এবং প্রোগ্রাম শেষে কাউন্সেলিং সেবা নেয়ার সুযোগ।

সাদাকায়নে আমরা কী সদকা করি?

কর্মব্যস্ত সপ্তাহান্তে একটি ছুটির দিন আত্মউন্নয়নমূলক কাজে সময় দেয়ার মাধ্যমে আমরা সময় ও শ্রমের সাদাকা করি। হিলিং পাঠ ও মেডিটেশনে যখন অন্যের রোগমুক্তি, সমস্যামুক্তি ও সাফল্যের জন্যে দোয়া করি- এটা সাদাকা।

সাদাকায়নে নিয়মিত হওয়ার মাধ্যমেই একজন মানুষ ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করেন। মাটির ব্যাংক, হিলিং, রক্তদান এবং কোর্সে উদ্বুদ্ধকরণ- এই কার্যক্রমগুলোর মধ্য দিয়ে মানুষের যে উপকার হচ্ছে এটা সাদাকা।

এ-ছাড়াও, সাদাকায়নে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজের জন্যে অর্থদানে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে।

কেন আসবেন সাদাকায়নে?

১. টোটাল ফিটনেস অর্জনে

সাদাকায়ন শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক- অর্থাৎ টোটাল ফিটনেস অর্জনে সাহায্য করে।

সাদাকায়নে নিয়মিত এলে আপনি পাবেন শারীরিক-মানসিক ফিটনেস অর্জনের চমৎকার দিক-নির্দেশনা।

সামাজিক ফিটনেসের প্রথম শর্ত হলো সমাজের অংশ হওয়া। আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে এসে সমাজকেন্দ্রিক হওয়া। এই সুযোগটা সাদাকায়ন খুব সহজে করে দেয়।

আর আত্মিক ফিটনেসের জন্যে জরুরি হলো সমমর্মিতা। সাদাকায়নে আত্মউন্নয়ন ও সৃষ্টির সেবামূলক কার্যক্রমগুলো আপনাকে সেই আত্মিক পূর্ণতা অর্জনের দিকেই নিয়ে যাবে।

২. সোশ্যাল মাসল মজবুত করতে

সোশ্যাল নিউরোসায়েন্সের প্রবক্তা ড. জন টি ক্যাসিওপ্পো তার দীর্ঘ গবেষণার ভিত্তিতে বলেন, দেহের পেশীর মতো প্রতিটি মানুষের অদৃশ্য একটি পেশী আছে, যার নাম সোশ্যাল মাসল। এই মাসল বা পেশী যত মজবুত হবে তত বাড়বে সুখের পরিমাণ।

অর্থ না খ্যাতি- কোনটা মানুষকে সুখী ও সুস্থ রাখে? হার্ভার্ড স্টাডি অফ এডাল্ট ডেভেলপমেন্ট গবেষণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে এর কোনটাই না! মানুষকে সুখী করে তার সামাজিক সম্পর্ক। দ্য ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জেনিয়া-এর স্কুল অফ বিজনেস এর সঙ্গে যোগ করে- সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেবল মানুষের সংখ্যা কিংবা সম্পর্কের গভীরতা নয়, বৈচিত্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, কত ধরণের মানুষের সাথে আপনি সুসম্পর্ক বজায় রাখছেন এটা প্রভাব ফেলে আপনার সুস্থতা ও সুখের ওপর।

সাদাকায়নে যত বিচিত্র ধরণের মানুষের সাথে মেলামেশার সুযোগ আপনি পাবেন তা অন্য কোথাও সেভাবে পাবেন না। ফলে সাদাকায়নে নিয়মিত উপস্থিতি মজবুত করবে আপনার সোশ্যাল মাসল। আপনি হবেন সুখী ও সুস্থ জীবনের অধিকারী।

৩. শুদ্ধাচার চর্চা

সাদাকায়নে সবাই মিলিত হয় হাসিমুখে সালাম বিনিময়ের মধ্যদিয়ে। পারস্পরিক খোঁজখবর ও কুশলায়নের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ইতিবাচকতার অনুরণন। সুবচন, সদাচরণ ও শিষ্টাচারের চর্চা হয় হাতেকলমে। সবার হাসিমুখ, সুন্দর কথা ও আচরণ নিতান্ত কষ্টক্লিষ্ট মানুষটিকেও আশাবাদে উজ্জীবিত করে তোলে।

৪. সমসাময়িক বিষয়ে সঙ্ঘের বিশ্লেষণ জানতে

সাদাকায়নে জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শোনার মধ্য দিয়ে আপনার জানার পরিমাণ যেমন বাড়বে, তেমনি সমসাময়িক ঘটনাবলী সম্পর্কে সঙ্ঘের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্লেষণ জানতে পারবেন। বুঝতে পারবেন সর্বোত্তম করণীয়; সতর্ক হয়ে যাবেন আসন্ন বিপদ সম্পর্কে, যেমনটা হয়েছিল করোনা মহামারিকালে।

এছাড়াও, কোয়ান্টাম মেথড কোর্স, বিভিন্ন ওরিয়েন্টেশন, কোয়ান্টায়নসহ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় এবং সেন্টার/শাখা/সেলের আগামী দিনের কার্যক্রম সম্পর্কে আপডেট জানতে সাদাকায়নে অংশ নিন।

৫. যৌথ মেডিটেশনের সুযোগ

মেডিটেশন কীভাবে করতে হয় জানেন না? আসুন সাদাকায়নে! মেডিটেশনের প্রাকটিক্যাল ডেমনস্ট্রেশন হয় এখানে।

তাছাড়া, এককভাবে মেডিটেশন করলে যে উজ্জীবন হয়, যৌথ মেডিটেশনে উজ্জীবনী শক্তি তার চেয়ে অনেক বেশি। কারণ যৌথ মেডিটেশনে অংশগ্রহণকারীদের মন পারদের মতো একাত্ম হয়ে যায়। সাদাকায়নে অনেকের সাথে মেডিটেশনে অংশ নিয়ে সহজেই মেডিটেশনের গভীর স্তরে প্রবেশ করতে পারবেন।

এছাড়া, সাদাকায়নে প্রতি সপ্তাহে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর মেডিটেশন পরিচালিত হয়। ফলে দেহ-মন ও সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষার সমস্ত কৌশল ঝালাই হয়ে যায় কিছুদিন পরপরই।

৬. স্রষ্টার রহমত লাভ

সঙ্ঘের সাথে স্রষ্টার রহমত থাকে। যেকোনো ভালো কাজ একা করার চেয়ে সঙ্ঘবদ্ধভাবে করলে তার প্রভাব ও বরকত অনেক বেশি হয়। ইতিবাচক সঙ্ঘবদ্ধতার অনন্য নজির হলো সাদাকায়ন। যতটা সময় সাদাকায়নে থাকবেন স্রষ্টার রহমতের বলয়ে থাকবেন।

সাদাকায়ন এখন কোয়ান্টাম জীবনাচারের অংশ। কোয়ান্টাম সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে এ যেন সাপ্তাহিক ঈদ!

আপনিও পরিবার, আত্মীয়-বন্ধু, প্রতিবেশী ও পরিচিতজনদের নিয়ে সাদাকায়নে অংশ নিন। টানা কয়েক সপ্তাহ অংশ নিয়েই দেখুন, আপনার ভেতর ইতিবাচক ধারণা ও আনন্দানুরণন অনেকখানি বেড়ে যাবে।

*সাদাকায়নের ভেন্যু (ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বরসহ) সম্পর্কে জানুন- Contact

*সাদাকায়নের আগামী দিনের আলোচনার টপিক, মেডিটেশন ও প্রোগ্রামটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- সাদাকায়ন সাইট