১ জানুয়ারি ২০২২ কোয়ান্টাম শুরু করেছে ৩০তম বছরের অভিযাত্রা। স্রষ্টার অপার অনুগ্রহে সিক্ত তিন দশকের পথপরিক্রমায় অর্জন ছিল অসামান্য। আত্মোন্নয়ন আর সৃষ্টির সেবা কাজগুলোয় প্রসার ঘটেছে উত্তরোত্তর।
বিগত প্রায় তিন দশকে কোয়ান্টামের অজস্র সফল উদ্যোগের মধ্যে ১৩টি যেভাবে শুরু হলো
স্বাধীন ভারতবর্ষ ছেড়ে যাবার সময় লর্ড মাউন্টব্যটেন নাকি বলেছিলেন, ‘’With the arms of Panjab’s, with the hearts of Maratha’s and with the Brain of Bengal’s I shall conquer the whole world’’. আবহমানকাল ধরে বাংলার মানুষের মস্তিষ্ক যে যথেষ্টই উর্বর ব্রিটিশ ভাইসরয়ের এই বক্তব্য তারই স্বীকৃতি!
তবে তিনি যেটা বলেন নি তা হলো- জাতিগতভাবেই আমাদের হৃদয় উষ্ণ। অন্যের প্রতি মমতা, সমমর্মিতা, ভালবাসা, হৃদয়ভরা টান-ই একটা সময় ছিল সুখ সমৃদ্ধি আর প্রাচুর্যের উৎস।
আমাদের এ-দেশ যেমন ধানের দেশ, তেমনি ধ্যানেরও। ধ্যানই পারে উষ্ণ হৃদয় আর ঠান্ডা মস্তিষ্কের সম্মিলন ঘটাতে। আর যখন তা ঘটবে তখন মানুষ পরিণত হবে অনন্য মানুষে, জাতি পরিণত হবে মহান জাতিতে। এই বোধ থেকেই কোয়ান্টাম আমাদের সামনে ধ্যানকে উপস্থাপন করেছে সহজ ভাষায়, বিজ্ঞানের সুরে।
১ জানুয়ারি ১৯৯৩ প্রকাশিত হয় বাংলা ভাষায় প্রথম মেডিটেশন ক্যাসেট 'শিথিলায়ন'। একই বছর প্রকাশিত হয় মন ও মেডিটেশন বিষয়ক বই 'কোয়ান্টাম মেথড’। অদ্যাবধি সর্বাধিক বিক্রিত নন-ফিকশন বই এটি।
তবে কেবল সিডি ও বই প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হয় নি, মানুষকে হাতেকলমে মেডিটেশন শেখাতে শুরু করে ৪ দিনের কোয়ান্টাম মেথড কোর্স।
দীর্ঘ ১ যুগের নীরব গবেষণার পর ১৯৯৩-এর ৭ জানুয়ারি হোটেল সোনারগাঁ-তে অনুষ্ঠিত হয় এই কোর্সের প্রথম ব্যাচ। সেই থেকে একে একে তিন দশকে সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৫০০ ব্যাচ। লাখো মানুষ পেয়েছে সুস্থতা প্রশান্তি প্রাচুর্য সাফল্য আর সুখের সন্ধান। একক প্রশিক্ষকের পরিচালনায় এতগুলো মেডিটেশন ক্লাস পরিচালনার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই!
আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়নের কার্যক্রমকে সুসংগঠিত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালের ২৪ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। অবশ্য তার আগেই কোয়ান্টামের শাখা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৫ সালের ২০ মে মিরপুর শাখা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।
সেই থেকে কালে কালে দেশে ও দেশের বাইরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০০+ শাখা-সেল-সেন্টার, যার লক্ষ্য সদস্যদের সঙ্ঘে একাত্ম রাখা। আর এর প্রধান মাধ্যম হলো 'সাদাকায়ন'।
মিরপুর শাখা গঠনের সময় থেকেই সাদাকায়ন কার্যক্রমের শুরু। আত্মউন্নয়নমূলক আলোচনা, যৌথ মেডিটেশন এবং অন্যের কল্যাণে দোয়ার এ কার্যক্রমটি এখন আয়োজিত হচ্ছে প্রতি শুক্রবার সকল সেল, শাখা ও সেন্টারে একযোগে। শাখাভিত্তিক আত্মউন্নয়নমূলক আরো বহু কার্যক্রম তো আছেই!
“সারা পৃথিবী আমার…” এই প্রত্যয়নের মতোই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের কার্যক্রম বিস্তৃত করেছে কোয়ান্টাম। শুরুটা ছিল ২০০২ সালে। গুরুজী ও মা-জীর ইউরোপ সফরকালে লন্ডনে মেডিটেশনের ওপর ৪ দিনব্যাপী সেমিনারের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মত বিদেশের মাটিতে বিস্তৃত হয় কোয়ান্টাম মেথডের পরিসর।
লন্ডনে সেমিনারের পরই সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি লন্ডন’-এর যাত্রা শুরু হয় সেবছরের ১৯ অক্টোবর।
আজকের দিনে ইংল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, কানাডা, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, জার্মানী, ফিনল্যান্ডে কোয়ান্টামের রয়েছে ১৯টি মেডিটেশন সোসাইটি ও ভার্চুয়াল সেল।
১৯৯৮ সালে গুরুজী ব্যক্তিগত এক সফরে বান্দরবানের লামায় যান। সেখানে বয়ে যাওয়া ঝর্নার ধ্বনি শুনে তিনি আত্মিক-আধ্যাত্মিক সাধনার জন্যে স্থানটিকে পছন্দ করেন। অল্প কিছু ভূমি সংগ্রহ করে শুরু হয় কোয়ান্টামমের যাত্রা।
আজকের দিনের পরিকল্পিত-পরিপাটি লামা তখন ছিল অত্যন্ত দুর্গম। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্যেও দুর্গম পাহাড়ি পথে ২১ কিলোমিটার হেঁটে লোহাগাড়ায় যেতে হতো। পুরো জায়গাটা ছিলো বুনো লতা-আগাছায় ছাওয়া। মশা-ম্যালেরিয়ায় পরিপূর্ণ প্রচণ্ড অস্বাস্থ্যকর এবং অনুর্বর এ জায়গাটিকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলা হত ক্যাষ্টা বা নিকৃষ্ট।
১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম স্থাপনা ধ্যানঘর নির্মাণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কোয়ান্টামম গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে এই ধ্যানঘরকে আরো বড় পরিসরে ১,৩০০ বর্গফুটের আয়তনে পুনর্নির্মাণ করা হয়।
২৪-২৭ ফেব্রুয়ারী ২০০২ ধ্যান উৎসবের মধ্য দিয়ে কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্যদের জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় কোয়ান্টামমকে।
কোয়ান্টামম প্রতিষ্ঠার পর ২০০০ সালে মুরংপাড়ার একটি স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে শ্রদ্ধেয় গুরুজী অনুধাবন করেন বঞ্চিত এ জনপদকে আলোকিত করতে হলে প্রয়োজন শিক্ষা। এর প্রেক্ষিতেই ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি ৭ শিশুকে নিয়ে শুরু হয় ‘কোয়ান্টাম শিশুকানন’, ২০১১ সালে যার নামকরণ হয় কোয়ান্টাম কসমো স্কুল।
আর কোয়ান্টাম কসমো কলেজ উদ্বোধন করা হয় ২০১২ সালের ২০ জুলাই।
দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের বিনা খরচে লেখাপড়া-আবাসনসহ ক্রীড়া ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সম্বলিত এই প্রতিষ্ঠানটি আজ শিক্ষা ও ক্রীড়ায় দেশজোড়া পরিচিতি ও স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ভাবনার শক্তি অপরিমেয়। ইতিবাচক ভাবনা সবসময়ই ইতিবাচক বাস্তবতার জন্ম দেয়। আর শোকরগোজার দৃষ্টিভঙ্গি মনে আনে প্রশান্তি, জীবনে আনে সাফল্য।
সবসময় ইতিবাচক থাকা, চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিকে বিরক্তি ছাড়াই গ্রহণ করার কথা শুরু থেকেই বলছে কোয়ান্টাম। পারস্পারিক সাক্ষাতে কুশল বিনিময়ে আমরা বলি ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ্, বেশ ভালো আছি!” আর সকালে ঘুম থেকে উঠে ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ’ অর্থাৎ স্রষ্টার কাছে শুকরিয়া জানিয়ে দিন শুরু করার অভ্যাস অনেকেরই হয়েছে কোয়ান্টামে এসে।
ব্যাপকভাবে এই অভ্যাসের চর্চা শুরু হয় ডিসেম্বর, ২০০৫-এ গ্রাজুয়েট ও প্রো-মাস্টার্সদের জন্যে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত ৪ দিনব্যাপী রিজুভিনেশন কোর্স থেকে।
স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও বঞ্চিতের সেবার নিয়তে দিনরাত্রির যে-কোনো প্রহরে দানের সুযোগ তৈরি হয়েছে কোয়ান্টাম মাটির ব্যাংকের মাধ্যমে।
কোয়ান্টামের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় স্বঅর্থায়নে। যার অন্যতম উৎস এই মাটির ব্যাংক।
‘সঙ্ঘবদ্ধ দান আনে অফুরন্ত কল্যাণ’- এই স্লোগান নিয়ে ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু কোয়ান্টাম মাটির ব্যাংকের। 'দিন শুরু হোক দানে আর কাজ শুরু হোক ধ্যানে' এই প্রত্যয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন তাদের দিন শুরু করেন মাটির ব্যাংকে দানের মধ্য দিয়ে।
‘দুঃসময়ের জন্য রক্ত সঞ্চয় করুন’- এই স্লোগান নিয়ে ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে যাত্রা শুরু হয় কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের।
শুরুতে এটি ছিল ব্লাড ডোনার পুল কার্যক্রম। মানে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা নিজেদের ব্লাড গ্রুপ এবং নাম, ফোন নাম্বার নিয়ে তালিকা তৈরি করে প্রয়োজন মোতাবেক হাসপাতাল বা ক্লিনিকে গিয়ে রক্ত দিয়ে আসতেন। কিন্তু অচিরেই দেখা গেল এভাবে রক্তদান ও রক্তগ্রহণ দুটোতেই অসুবিধা হচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত হয় ল্যাব স্থাপনের।
২০০০ সালের ১ এপ্রিল শুরু হয় ল্যাবের যাত্রা। কাকরাইলের ওয়াইএমসিএ ভবনের নীচ তলায় ফাউন্ডেশনের স্বঅর্থায়নে ১৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয় রক্ত সংরক্ষণ ও সেল সেপারেশনের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ আধুনিক ব্লাডব্যাঙ্ক। পরবর্তীতে সুযোগ সুবিধা বর্ধিত করে ২০০৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কোয়ান্টাম ল্যাব স্থানান্তর করা হয় শান্তিনগরে।
এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই কীভাবে হৃদরোগ প্রতিহত করা যায় তার ফলিত রূপ কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাব। ২৩ এপ্রিল ২০১০ জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে হার্ট ক্লাবের উদ্বোধন হয়। আর এর প্রথম ব্যাচ অনুষ্ঠিত হয় একই বছর ২১ ও ২২ মে কোয়ান্টাম মেডিটেশন হল কাকরাইলে। বর্তমানে এই কোর্সটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘কোয়ান্টাম হার্ট কেয়ার ওরিয়েন্টেশন’ নামে।
কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাব এর উদ্যোগে ‘এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ’ শিরোনামে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত হৃদরোগ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বই প্রকাশিত হয় ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩।
মেডিটেশন বিষয়ে বিশ্বের সমৃদ্ধতম ওয়েবসাইট ‘কোয়ান্টাম মেথড’। এর যাত্রা শুরু ১৯৯৯ সালে quanfey.org ডোমেইনে। ২০০৬ সালের অক্টোবরে শবে কদরের রাতে প্রকাশিত হয় নতুন ডোমেইনে নিজস্ব টিমের তৈরি ওয়েবসাইট quantummethod.org.bd।
২০১০ সালে শুরু হয় সাইট আর্কিটেকচার থেকে শুরু করে কনটেন্ট, ডিজাইন, ফিচার সবকিছুকে ঢেলে সাজানোর কাজ। ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি বর্ষায়নে উদ্বোধন হয় নিজস্ব কনটেন্টের বিষয়বৈচিত্র ও পরিসরে বাংলা ভাষার সবচেয়ে সমৃদ্ধ এই ওয়েবসাইট।
১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ মহান বিজয় দিবসের দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয় নতুন আঙ্গিকে সজ্জিত কোয়ান্টাম ওয়েবসাইট quantummethod.org.bd।
নতুনভাবে বিন্যস্ত মাস্টার হোমপেজ এবং ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শের আলোকে ঢেলে সাজানো ডিজাইন, ফিচার, সার্ভিস ইত্যাদি মিলিয়ে কোয়ান্টাম ওয়েবসাইট এখন নিজস্ব কনটেন্টে পৃথিবীর সমৃদ্ধতম ওয়েবসাইটগুলোর একটি।
সত্যের কথা, কল্যাণের কথা কোয়ান্টাম সবসময়ই বলেছে দ্বিধাহীন চিত্তে। ফেসবুকের সম্ভাব্য বিধ্বংসী রূপের বিরুদ্ধে প্রথম থেকে অবস্থান গ্রহণ করে কোয়ান্টাম।
২০১৮ সালে ‘কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’ স্ক্যান্ডালের পর থেকে পৃথিবীজুড়ে শুরু হয় ‘ডিলিট ফেসবুক’ ক্যাম্পেইন। মজার ব্যাপার হলো কোয়ান্টাম ফেসবুক বর্জনের ডাক দিয়েছে এরও প্রায় এক দশক আগে ২০০৯ সালে, যখন দেশে ফেসবুক জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে, যখন এর বিরুদ্ধে বলার মতো লোক সেভাবে কেউ ছিল না।
ফেসবুকের ও অন্যান্য তথাকথিত 'সোশ্যাল মিডিয়া'গুলোকে কোয়ান্টাম আখ্যা দেয় ‘ভার্চুয়াল ভাইরাস’ এবং ২০১৮ সালে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপকভিত্তিক ক্যাম্পেইন শুরু করে ফাউন্ডেশন। নির্মিত হয় বেশ কিছু সচেতনতামূলক ডকুমেন্টারি ও ভিডিও ক্লিপ, প্রকাশিত হয় ভার্চুয়াল ভাইরাস স্টিকার, ফোল্ডার ও বুলেটিন। স্টিকার করসেবা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।
উল্লেখ্য, সেবছরই বিশ্বজুড়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট হয় ১৫০ কোটি!
বেওয়ারিশ মৃতদেহ বা দাফনে অক্ষম অভাবগ্রস্তের মৃতদেহ পূর্ণ ধর্মীয় মর্যাদায় দাফন বা সৎকারের ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০০৪ সালের মার্চ মাসে শুরু হয় দাফন কার্যক্রম। প্রথমে রাজশাহীতে শুরু হলেও পরবর্তীতে চট্টগ্রাম, লামা, খুলনা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
দেশে কোভিড-১৯ বিস্তারের সূচনালগ্নে করোনায় মৃতদের ফেলে যখন স্বজনেরা পালিয়ে যাচ্ছিল, করোনা আতঙ্কে মানবিকতাকে বিসর্জন দিচ্ছিল অনেক মানুষ তখন কোয়ান্টাম ঘোষণা করে, করোনায় যারা মারা যায় তারা শহিদ এবং শহিদের মর্যাদায় জানাতে হবে তাদের শেষ বিদায়।
ঘোষণা করে বসে থাকে নি কোয়ান্টাম, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সদস্য স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে শুরু করে করোনা শহিদ দাফন কার্যক্রম।
সেই থেকে আজ অবধি ৬৫০০+ মানুষের সম্মানজনক শেষ বিদায় নিশ্চিত করেছে সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাসেবায়। কাজটি এখনো রয়েছে অব্যহত।
কোরআন নাজিল হয়েছে ধ্যানের স্তরে, নবীজীর (স) শিক্ষা অনুসারে কোরআনকে বুঝতেও হবে ধ্যানের স্তরে- এই দর্শনের ফলিত রূপ হলো কোয়ান্টায়নে খতমে কোরআন।
মৌনতা ও মনোযোগের সাথে কোরআনের শিক্ষা অনুধাবনের এই বিশেষ কার্যক্রমটি আয়োজিত হয় প্রতিবছর পবিত্র রমজানে, যার সূচনা ১৯৯৯ সালে। একটানা ৭ দিনে ৫২ ঘন্টা মৌন থেকে ধ্যানের স্তরে তরজমাসহ কোরআন তেলাওয়াত শোনার এ আয়োজন শান্তিনগর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শুরু হলেও ২০০৩ সাল থেকে একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিভিন্ন শাখা ও সেন্টারে।
২০১৪ সালের ২৯ জুন পহেলা রমজান প্রকাশিত হয় পূর্ণাঙ্গ ‘আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী’। আর আরবি ও বাংলা ভাষায় একসাথে প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ ‘আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয় ২০১৭ সালের ১৬ জুন প্রোমাস্টার আখেরি দোয়ায়।
অন্যদিকে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী বাংলা একাডেমি বইমেলায় প্রকাশিত হয় এক অনবদ্য প্রকাশনা ‘শুদ্ধাচার’। স্রেফ একটি বই নয়, নৈতিক পুনর্জাগরণের ম্যানুয়াল এটি। ২৫ মার্চ, ২০২০ বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এর অধীন সকল অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরিতে শুদ্ধাচার বইটি রাখার নির্দেশ দেয়।
আর ১২৬৮টি হাদীসের বাংলা মর্মবাণী নিয়ে হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী বইটি প্রকাশিত হয় ২০২১ সালের মাহে রমজানে।