৭০% মূল্যহ্রাসের অফার পেয়ে শপিং করতে হামলে পড়েন না এমন মানুষ বিরল। কোথায় বিনিয়োগ করলে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে, সেটা নিয়েও খোঁজ-খবর রাখি আমরা অনেকেই। কিন্তু আমরা কি এই খবর রাখি, বছরের বিশেষ একটি মৌসুমে ‘বিনিয়োগ’ করলে ৭০ ভাগ না, রীতিমতো ৭০ গুণ প্রতিদান পাওয়া যাবে! আর এর নিশ্চয়তা দিয়েছেন এমন একজন, যিনি দিতে পারেন এর চেয়েও বহু বহুগুণ বেশি!
বলছি রমজানে দানের কথা।
কাজেই এ মাসে দান করে আপনি পাবেন বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব।
রসুলুল্লাহ (স) সাহাবীদের রমজানে বেশি বেশি দান করতে উৎসাহিত করতেন। অন্যদের উৎসাহিত করেই তিনি ক্ষান্ত হন নি, তাঁর শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন নিজের জীবনে। বোখারী শরীফের হাদীসমতে রমজান মাসে নবীজীর (স) দানশীলতা বেড়ে যেত বহুগুণ।
রমজানে একটি নফল ইবাদত একটি ফরজের সমান। সে হিসেবে রমজান মাসে আমাদের প্রতিটি দান-সদকা পায় ফরজ আদায়ের মর্যাদা।
দান-সদকার এমন অসামান্য ফজিলত অন্যান্য মাসে পাওয়া যাবে না। এই ‘অফার’ সীমাবদ্ধ শুধুই রমজানের এই একটি মাসে!
আসলে অর্থ থাকলেই দান করা যায় না। আমরা যখনই হাত খুলে দান করতে চাই তখনই মনে তৈরি হয় খচখচানি-
‘দান করলে তো কমে যাবে!’
‘দান করে যদি হাতের সব খরচ করে ফেলি তাহলে আমার চলবে কী করে?’
‘কী দরকার এত দান-সদকার? ইবাদত-আমল কি কম করি!’
‘গরীবের আর দান কী? আগে বড়লোক হই, তারপর দান করবো!’
‘হাতখুলে দেয়ার কী দরকার, ভিখারির হাতে দু’-চার টাকা দিলেই তো হলো!’
এমন নানা অহেতুক প্রশ্ন-দ্বিধা-বিভ্রান্তি এসে দানের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। আর এর সবই আসলে শয়তানের ধোঁকা।
দানের মাধ্যমে পাপমোচন আর স্রষ্টার আনুকূল্যলাভের সুমহান প্রয়াসকে বিঘ্নিত করতে চায় যে শয়তান, রমজানের এই একটি মাস তাকে বন্দি করে রাখা হয়, যাতে আমরা স্রষ্টার রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতলাভের সুযোগটাকে অকাতরে গ্রহণ করতে পারি।
আসলে সেই দানটাই স্রষ্টার কাছে পছন্দের, যেটা করতে গিয়ে বান্দার মনে জ্বলুনি তৈরি হওয়ার পরও সে দান করে।
ধরুন, একজন কোটিপতির হাজার টাকা দানে বাঁধবে না। কিন্তু হাতে লাখ টাকা আছে যার, হাজার টাকা দান করতে গেলে তার ভেতর থেকে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। সেটা উপেক্ষা করে যিনি দান করতে পারেন সত্যিকারের দাতা তো আসলে তিনি-ই!
একবার নবীজী (স) তাঁর অনুসারীদের দানের আহ্বান জানালেন। হযরত ওমর (রা) দানশীলতায় হযরত আবু বকরকে (রা) ছাড়াতে চাইলেন; তিনি তাঁর সম্পত্তির অর্ধেক নবীজীর (স) কাছে পেশ করলেন। নবীজী (স) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার পরিবারের জন্যে কী রেখে এসেছো? হযরত ওমর জবাব দিলেন, সম্পত্তির বাকি অর্ধেক!
একটু পরে হযরত আবু বকর (রা) তাঁর সম্পত্তি নবীজীর (স) নিকট সমর্পণ করলেন। নবীজী (স) তাকেও জিজ্ঞেস করলেন পরিবারের জন্যে সে কী রেখে এসেছে। হযরত আবু বকর (রা) উত্তর দিলেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকে রেখে এসেছি! অর্থাৎ, তিনি তাঁর সমুদয় সম্পত্তি দান করেছিলেন।
হযরত ওমর (রা) বুঝলেন কেন দানশীলতায় তিনি হযরত আবু বকরকে (রা) কখনোই ছাড়াতে পারবেন না!
আসলে আল্লাহ তো অভাবমুক্ত! আপনি এক টাকা দান করুন বা এক কোটি- কোনো পরিমাণেই আল্লাহ্র কিছু যায় আসে না। কিন্তু বান্দা যখন আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্যে নিজের যা আছে সেখান থেকে ভালো পরিমাণ অকাতরে দান করে তখন তিনি সেই বান্দার প্রতি খুশি হন।
স্রষ্টার নির্দেশ পরিপালনের পাশাপাশি অনেক সওয়াবও পাওয়া যায় যাকাত দেয়ার মাধ্যমে। তবে বাড়তি সওয়াবের আশায় অনেকেই যাকাত পরিশোধ করেন মাহে রমজানে।
সকল ব্যয় নির্বাহের পর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ এক চান্দ্রবছর জমা থাকলেই আপনি সম্মানিত যাকাতদাতা! অধিক সওয়াবের জন্যে আপনার প্রদেয় যাকাত এই রমাজনেই দিন, আদায় করুন সঙ্ঘবদ্ধভাবে। কোয়ান্টাম যাকাত ফাণ্ডে যাকাত প্রদানে আপনি পাবেন ৭০ গুণ সওয়াব!
রোজা রেখে রক্ত দেয়া যায় না- অনেকের মধ্যেই আছে এই ভুল ধারণা। অথচ রোজা রেখে রক্ত দেয়া তো যায়ই, বরং এ-মাসে রক্তদান অন্যান্য মাসের চেয়ে বেশি কল্যাণের। কারণ রক্তদান অত্যন্ত ওজনদার একটি সৎকর্ম, যা রমজানে পালন করলে পাবেন সত্তরগুণ সওয়াব।
রক্ত দিতে পারেন কোয়ান্টাম ব্লাড ল্যাবে। কারণ এখানে এক ব্যাগ রক্ত থেকে ৪টি রক্ত উপাদান পৃথক করে যার যেটা প্রয়োজন তাকে সেই উপাদানটি দেয়া হয়। কাজেই এক ব্যাগ রক্তদান ৪টি জীবন বাঁচানোর সমান কল্যাণের। রমজান মাসে এই একই কাজ ৪ X ৭০, মানে ২৮০টি জীবন বাঁচানোর সমান!
নবীজীর (স) একটি হাদীস হচ্ছে, সততার সাথে দান সংগ্রহকারী ও দান বিতরণকারী দাতার মতোই সমভাবে পুরস্কৃত হবে।
কাজেই আপনার উৎসাহ অনুপ্রেরণায় যখন কেউ দান করবে তখন আপনিও পাবেন দাতার সমান সওয়াব।