শুধু আত্মশুদ্ধিই নয়, টোটাল ফিটনেসের মাস রমজান। অর্থাৎ, শারীরিক মানসিক সামাজিক আত্মিক- সবদিক থেকে ভালো থাকার মাস এটি। রোজার প্রাথমিক প্রাপ্তিই হচ্ছে দেহমনের সুস্থতা। নবীজী (স) বলেছেন, “তোমরা রোজা রাখো যেন সুস্থ থাকতে পারো।” আরেকটি হাদিসে আছে, "সবকিছুরই যাকাত অর্থাৎ শুদ্ধি প্রক্রিয়া রয়েছে। শরীরের যাকাত হচ্ছে রোজা!"
রোজা বা উপবাস নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে এবং তাতে খুব পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে, রোজা রাখলে প্রদাহ, জ্বালাপোড়া, ব্যথা, সংক্রমণ ইত্যাদি কমে যায়, বেড়ে যায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যা বার্ধক্যকে প্রতিহত করে, মস্তিষ্ককে করে ক্ষুরধার। আর এগুলো সাধিত হয় অটোফেজি নামক শারীরবৃত্তীয় একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
তাই রমজানে নবীজীর (স) প্রদর্শিত জীবনাচার অনুসরণ করলে দূর হবে আপনার দেহ-মনের বিষাণু।
ক্যামব্রিজের এডেনব্রুকস হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া এন্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিনের কনসালট্যান্ট ড. রাজিন মাহরুফ বলেন, "দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার খাই এবং এর ফলে আমাদের শরীর অন্য অনেক কাজ ঠিকমত করতে পারে না, যার একটি হলো নিজেই নিজেকে সারিয়ে তোলা। কিন্তু রোজার সময় শরীর অন্যান্য কাজের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। ফাস্টিং শরীরের ক্ষত সারিয়ে তোলে, রোধ করে সংক্রমণ।"
এছাড়াও রোজাকালে শরীরের পাচকতন্ত্র, যকৃৎ, কিডনি ও দেহত্বক এক ধরণের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যায়। সেগুলো থেকে সকল দূষিত বস্তু বেরিয়ে শরীর হয়ে ওঠে শুদ্ধ।
গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক-মানসিক ভালো থাকা খাবার ও পানীয়ের সাথে সরাসরি যুক্ত। আমরা যা খাই সেখান থেকে সংগৃহীত পুষ্টিই দেহের কোষগুলোর মেমব্রেনস, বোনম্যারো, রক্ত, হরমোন, টিস্যু, অঙ্গ, ত্বক, চুল- সবকিছুর গঠনপ্রকৃতি নির্ধারণ করে। কিন্তু কোনো কারণে এই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এমন রাসায়ানিক উপাদান ছেড়ে দেয় যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে, মাঝেমধ্যে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে বিনষ্ট ভারসাম্য আবার আগের অবস্থা ফিরে পায়। ফলে তরতাজা ও চাঙা হয়ে ওঠে শরীরের অভ্যন্তরীণ জৈবরাসায়নিক ব্যবস্থা।
আর তা হচ্ছে খাদ্যসংযম, বিজ্ঞানসম্মত খাদ্যাভ্যাস।
খেজুর-পানি দিয়ে ইফতার সেরে মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারে রাতের আহার সম্পন্ন করা আর সেহরিতে হাল্কা খাবার গ্রহণ- রমজানে এভাবে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে আপনার পেট ও পরিপাকক্রিয়া ভালো থাকবে।
আর ১৩-১৬ ঘন্টা উপবাসে অটোফেজি পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় হয় বিধায় গ্রীষ্মকালীন রোজায় দেহকোষের অভ্যন্তরে সৃষ্ট টক্সিনগুলো অনেকাংশেই দূর হবে যদি আমরা রমজানে ইফতার ও সেহরির শুদ্ধাচারগুলো অনুসরণ করি।
এর জন্যেও রয়েছে কিছু শর্ত! রমজানে বর্জন করুন ফালতু বিনোদন, আজেবাজে ও অপ্রয়োজনীয় কথা, চেঁচামেচি, ঝগড়া-বিবাদ, দুর্ব্যবহার, পরনিন্দা, পরচর্চা, গীবত। সেই সাথে সাধ্যমত অংশ নিন সৃষ্টির সেবায়।
নবীজী (স) রোজার মাসে দান অনেক বাড়িয়ে দিতেন। তাঁর দেখানো পথ আপনিও অনুসরণ করুন; সেহরি শুরু করুন মাটির ব্যাংকে দান করে।
এই বিষয়গুলোর আন্তরিক অনুসরণে আপনার মনও মুক্ত হবে দূষণ ও বিষাণু থেকে, আপনি অর্জন করবেন মেন্টাল ফিটনেস।