ইসলাম নারীকে যেসব অধিকার দিয়েছে তা কি আপনি জানেন?

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী অধিকারের স্মরণে পশ্চিমা কিছু দেশ একযোগে নারীদের জন্যে বিশেষ দিন উদযাপন করতে শুরু করে ১৯১১ সাল থেকে। এজন্যে অনেকের বদ্ধমূল ধারণা নারী অধিকার বুঝি আধুনিক কিছু! এবং পশ্চিমারাই নারীকে প্রথম অধিকার দিয়েছে। অথচ ইসলাম নারীকে অধিকার দিয়েছে এরও বহু বহু বছর আগে।

আজ থেকে ১৪শ বছর আগে নবীজী (স) নারীর যেসব অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন সে বিষয়ে সচেতন নন খোদ নারীরাই! নবীজী (স) তার জীবনে নারীকে যে মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছেন বহু আধুনিক সমাজ তা দিতে পারে নি।

আসুন নারী দিবসের প্রাক্কালে জেনে নেই ইসলামে নারীর কিছু অধিকার।

১. জ্ঞান অর্জনের অধিকার

একজন মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে জ্ঞান। নবীজী (স) জ্ঞান অর্জনকে প্রত্যেক নর-নারীর জন্যে ফরজ ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ, নারীকে জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত রাখার সুযোগ নেই।

শুধু ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না নারীর এই অধিকার। নবীজী (স) তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। মসজিদে নববীতে যখন তিনি আলোচনা করতেন তখন একদিকে বসত পুরুষরা, অন্যদিকে নারীরা। নবীজী (স) কখনো পুরুষদের দিকে তাকিয়ে কথা বলতেন, কখনো মহিলাদের দিকে তাকিয়ে।

২. বিয়ের ব্যাপারে সম্মতির অধিকার

আগে বিয়ের ব্যাপারে নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো মূল্য ছিল না। নবীজীই (স) প্রথম যিনি বিয়ের ব্যাপারে নারীকে স্বাধীনতা দেন। তিনি ঘোষণা করেন- বিধবা হোক বা কুমারী, কোনো নারীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়া যাবে না।

ইসলামে পুরুষ বিয়ের প্রস্তাবক মাত্র। গ্রহণকারী হচ্ছে নারী। তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত কবুল না বলছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বিয়ে হবে না!

৩. নিজ পেশার অধিকার

উপার্জন, আত্মপরিচয় ও কর্মের ব্যাপারে নবীজী (স) নারীকে শুধু অধিকারই দেন নি, অধিকার বাস্তবায়ন করে দেখিয়েও গেছেন।

নবীজী (স) সেনা ও নৌবাহিনীতে নারী যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছেন, তারা সাগর পাড়ি দিয়ে যুদ্ধও করেছে। একজন নারী সাহাবী নবীজীর (স) কাছে নৌযুদ্ধে অংশ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে নবীজী (স) তা অনুমোদন করেন। সেই নারী রোমানদের বিরুদ্ধে নৌযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেখানেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন।

বদর-ওহুদ-খন্দক-খায়বরের যুদ্ধে চিকিৎসার জন্যে যুদ্ধাহতদের নারী সাহাবা রুফাইদা বিন সা’দের ফিল্ড হাসপাতালে পাঠাতেন স্বয়ং নবীজী (স)।

নবীযুগের পর খলীফাদের সময়ও বাজার নিয়ন্ত্রক, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নারীরা।

৪. নিজের উপার্জনের ওপর অধিকার

নবীজী (স) নারীকে কর্মের অধিকারই শুধু দেন নি, নিজ উপার্জিত অর্থের ওপর তাকে কর্তৃত্বও দিয়েছেন। একজন নারী যদি তার উপার্জিত অর্থ তার স্বামীকে স্বেচ্ছায় না দেয় তাহলে সেই অর্থে পুরুষের অধিকার নেই।

৫. স্বামীর উপার্জনের ওপর অধিকার

অন্যদিকে, স্বামীর উপার্জনের ওপর স্ত্রীর অধিকার রয়েছে। কারণ তিনি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন সম্মানজনক খোরপোষসহকারে। এই প্রস্তাবে নারী সম্মতি দিয়েছেন।

স্ত্রীকে সম্মানজনক ভরণপোষণ স্বামীকে দিতে হবে, যদি স্ত্রী কর্মজীবী হন তারপরও।

৬. উত্তরাধিকার

সেকালে বাবার সম্পদে নারীর উত্তরাধিকার ছিল না। বিশ্বে নবীজীই (স) প্রথম নারীকে এই অধিকার দেন।

পবিত্র কোরআনে যে ১২ জন উত্তরাধিকারীর কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে ৮ জনই নারী!

৭. পিতৃপরিচয় সংরক্ষণের অধিকার

ইউরোপে নারীরা কুমারী নাম সংরক্ষণের অধিকার পেয়েছে গত শতাব্দীতে এসে। অথচ এই অধিকার নবীজী (স) প্রতিষ্ঠা করেন ১৪শ’ বছর আগে!

তাঁর সাথে বিয়ের পর আয়েশা মুহাম্মদ নয়, আয়েশা সিদ্দিকা নামেই আজীবন পরিচিত থেকেছেন নবীজীর (স) এই সহধর্মিনী।

৮. সন্তানের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার

নবীজীর (স) একটি হাদীস হলো- মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। বাবার ক্ষেত্রে এটা বলা হয় নি! সন্তানের কাছ থেকে সেবা পাওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রেও মাকে তিনি স্থান দিয়েছেন বাবার উপরে।

একজন সাহাবী রসুলুল্লাহকে (স) জিজ্ঞেস করলেন যে, আমার কাছ থেকে সেবা পাওয়ার অধিকার সবচেয়ে বেশি কার? তিনি বললেন, তোমার মায়ের।

সাহাবী আবার জিজ্ঞেস করলেন, এরপরে কার? নবীজীর (স) উত্তর- তোমার মায়ের।

সাহাবী আবারো বললেন, এরপর কার? উত্তর- তোমার মায়ের।

চতুর্থ বার যখন জিজ্ঞেস করলেন, তখন বললেন যে, তোমার বাবার।

অর্থাৎ, সন্তানের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে মা ৭৫%, আর বাবা ২৫%!

৯. স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকার

স্বামীর যেমন স্ত্রীর ওপরে অধিকার রয়েছে, স্ত্রীর অধিকারও স্বামীর ওপরে কোনো অংশে কম নয়। একটি হাদীস- তোমাদের মধ্যে সেই পুরুষই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।

অর্থাৎ, স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকারকে নবীজী (স) স্বীকৃতি দিয়েছেন।

১০. বিয়ে-বিচ্ছেদের ব্যাপারে মত প্রকাশের অধিকার

বিয়ে-বিচ্ছেদেও নারীর অধিকারের স্বীকৃতি নবীজীই (স) প্রথম দিয়েছেন। একটি ঘটনা দিয়ে আমরা বিষয়টাকে বুঝতে পারি।

বারিরা ছিল হযরত আয়েশার (রা) ক্রীতদাস। আয়েশা (রা) তাকে আজাদ করে দিলেন। তার স্বামী মুগিস তখনও ক্রীতদাস। মুক্ত হওয়ার পরে বারিরা সিদ্ধান্ত নিল ক্রীতদাস স্বামীর সাথে সংসার করবে না। উপায়হীন হয়ে মুগিস রসুলুল্লাহর (স) কাছে গিয়ে কান্নাকাটি শুরু করল। তিনি বারিরাকে ডাকলেন। বললেন, মুগিসের তো এই অবস্থা! তুমি যদি তাকে গ্রহণ করতে তাহলে খুব ভালো হতো।

বারিরা বলল, হে আল্লাহর রসুল (স)! আমার প্রতি এটা কী আপনার নির্দেশ?

নবীজী (স) বললেন যে, নির্দেশ না, এটা পরামর্শ। আমি সুপারিশ করছি।

তখন বারিরা বললেন, তাহলে ইয়া রাসুলুল্লাহ (স)! আপনি শুনে রাখুন আমার জীবনে মুগিসের কোনো প্রয়োজন নেই!

নবীজী (স) তখন রাষ্ট্রপ্রধান, সেনাপ্রধান, ধর্মীয় প্রধান এবং বিচারক প্রধান। অর্থাৎ, সব ক্ষমতা তার কাছে। অথচ তাঁর মুখের ওপর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে একজন সদ্যমুক্ত ক্রীতদাসী! একজন মহিলা কতটা স্বাধীনতা পেলে, নিজেকে কতটা নিরাপদ মনে করলে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের সামনে এভাবে কথা বলতে পারেন তা সহজেই বোঝা যায়।