শিক্ষাবিদ, লেখক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের খ্যাতিমান অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের সাবেক ডীন। সুস্বাস্থ্য, মেডিটেশন, সুস্থ জীবনাচার ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস বিষয়ে নিয়মিত লিখছেন কোয়ান্টাম ওয়েবসাইটে।
নভেম্বরের পয়লা তারিখ থেকেই স্ট্রেস নিয়ে সচেতনতার দিন শুরু।
আমাদের সবার জীবনে আসে স্ট্রেস; কিন্তু স্ট্রেস বেশি হলে তা শরীর আর মনের কুশলে ঘটায় বিঘ্নতা।
একটি কথা বলা ভালো—আমাদের জীবনে আসে চ্যালেঞ্জ, আসে বাধাবিঘ্ন। আসে প্রতিকূল পরিস্থিতি। আসে হুমকি। আর একে রুখে দেয়ার জন্যে শরীরে যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হয় তা হলো স্ট্রেস।
স্বল্প সময়ের স্ট্রেস আনতে পারে হিতকর ফল। বৈরি পরিবেশ মোকাবেলা করতে মানিয়ে নিতে শেখায় নিজেকে। কিন্তু ক্রনিক স্ট্রেস শরীরের ওপর মনের ওপর আঘাত হানে আর এতে ঘটে মানসিক সমস্যা, যেমন : বিষণ্ণতা দুশ্চিন্তা অনিদ্রা। আর শরীরও রেহাই পায় না। হতে পারে ডায়েবেটিস, হৃদরোগ।
কী করে মোকাবেলা করা যাবে স্ট্রেস?
মাইন্ডফুলনেস বা মনোযোগিতা আর ধ্যান। আত্মমগ্নতা সম্ভব ধ্যানে। এতে থাকা যাবে বর্তমানে। আর মন হবে লক্ষ্যনির্দিষ্ট বা ফোকাসড।
ধ্যান মনকে করে শিথিল, শান্ত করে স্নায়ু। কমায় স্নায়ুর চাপ। চিন্তাভাবনা আর আবেগের ওপর ফিরিয়ে আনে নিয়ন্ত্রণ।
নিয়মিত ব্যায়াম। শরীরচর্চার ফলে নিঃসৃত হয় এন্ডোরফিন, যা প্রকৃতিজাত মুড লিফটার। হতে পারে দ্রুত হাঁটা, ইয়োগা। নিয়মিত ব্যায়াম কমায় স্ট্রেস। আর বাড়ায় সার্বিক কুশল।
সেইসাথে খেতে হবে সুষম খাদ্য। এতে থাকবে প্রচুর ফল সবজি নানা রঙের, হোল গ্রেন, কচি মাংস, মাছ, দুধ, ডিম, বাদাম, পানি। তাতে স্ট্রেস প্রতিহত করার জন্যে শরীর প্রস্তুত হয়।
এড়িয়ে যেতে হবে প্রসেস করা বা প্রক্রিয়াজাত খাবার, কোমল পানীয়, বেশি তেল, চর্বি, চিনি, মিষ্টি। বাদ দিতে হবে ধূমপান আর মদ্যপান।
যথেষ্ট ভালো ঘুম চাই। একটি সুনিদ্রার রাত দরকার স্ট্রেস কমানোর জন্যে।
ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে এজন্যে। ঘুমের জন্যে চাই শান্ত শীতল কোলাহলমুক্ত পরিবেশ, ডিজিটাল ডিভাইসমুক্ত পরিবেশ। ঘুমের দু-তিনটি ঘণ্টা আগে ক্যাফেইন বাদ। ভরপেট খাওয়া বাদ। ঘুমের আগে মোবাইল, টিভি, ফোন থেকে দূরে থাকা।
বাস্তবসম্মত লক্ষ্যে ধাবিত হতে হবে। অবাস্তব প্রত্যাশা সৃষ্টি করে স্ট্রেস।
আয়াসসাধ্য লক্ষ্য স্থির করতে হবে আর ছোট ছোট ধাপে কাজ করে এগিয়ে যেতে হবে।
কার্যকর টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে জানলে স্ট্রেস হয় না। টু ডু লিস্ট করুন। কাজ হবে।
প্রিয়জনের সাথে সংযোগ রাখুন। সোশ্যাল সাপোর্ট খুব দরকার। এজন্যে যুক্ত থাকতে হবে পরিবার, প্রতিবেশী আর বন্ধুদের সাথে। অনুভূতি উদ্বেগ সব শেয়ার করতে হবে।
‘না’ বলা শিখতে হবে। নিজের সীমাবদ্ধতা জানতে আর স্বস্তি বোধ না করলে ‘না’ বলতে হবে। বেশি বেশি অঙ্গীকার করা মানে অনেক বেশি স্ট্রেস।
রিলাক্সেশন বা শিথিলায়ন কৌশল আছে নানা রকম। যেমন : ব্রিদিং টেকনিক, প্রাণায়াম, ইয়োগা, ডিপ ব্রিদিং ভালো কিছু টেকনিক স্ট্রেস কমানোর জন্যে।
প্রয়োজনে চাইতে হবে পেশাদার পরামর্শ। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিদের দিক-নির্দেশনা নিতে পারেন।